সন্তান ধারণ করা একজন নারীর জীবনের অত্যন্ত বড় একটি ঘটনা। সন্তান ধারণ, সন্তানের জন্ম এবং একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সার্বক্ষণিক সন্তানের দেখাশোনা করা, সব মিলিয়ে বেশিরভাগ নারীই যেন হারিয়ে ফেলেন নিজেকে। হারিয়ে ফেলেন নিজের সেই রূপ ও সৌন্দর্য, নিজের সত্ত্বা। সন্তান লালন পালন অবশ্যই সবচাইতে জরুরী, কিন্তু একইসাথে একটু মনযোগ দিতে হবে নিজের দিকেও। অন্যথায় দাম্পত্য জীবনে দেখা দিতে পারে সমস্যা, আপনি নিজেও ভুগতে পারেন হীনমন্যতা ও হতাশায়। চলুন, জেনে নিই ৮টি সহজ উপায়, যেগুলো সন্তান হবার পর অল্প সময়ে চটজলদি ফিরিয়ে দেবে আপনার সৌন্দর্য।
১) সন্তান হবার পর একজন ডায়েটেশিয়ানের সাথে যোগাযোগ করুন। সম্ভব হলে সন্তান ডেলিভারির আগেই করুন। কীভাবে সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়েও আপনি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, সেটা জেনে নিন ও ডায়েট চার্ট তৈরি করিয়ে নিন। সন্তান হবার পর ওজন বেড়ে গিয়েছে? চেহারা মলিন ও বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে? সন্তানের বয়স যতই হোক না কেন, একজন ডায়েটেশিয়ান দেখিয়ে ডায়েট চার্ট অবশ্যই করে নিন। তাঁকে আপনার লাইফ স্টাইল ও রুটিন সম্পর্কে খুলে বলুন। তিনি সেটার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই আপনাকে একটা ডায়েট চার্ট করে দেবেন।
২) যাদের পক্ষে পেশাদার ডায়েটেশিয়ান দেখানো সম্ভব না, তাঁরা নিজেরাই একটা রুটিন তৈরি করে নিন। স্বাভাবিক ভাবে যা খান, তাই খাবেন। শুধু খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার, সফট ড্রিঙ্ক, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। এসব খাবার আপনার সন্তানের কোন উপকারে আসে না, আপনারও নয়। এসব ছাড়ার পাশাপাশি রোজ অল্প অল্প করে হাঁটুন। ধরণ বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর ছলেই খানিকটা হেঁটে নিলেন। বাচ্চার সাথে দৌড়া দৌড়ি করে খেলুন। এতেই আপনার ব্যায়ামের কাজ হয়ে যাবে।
৩) একজন ভালো বিউটিশিয়ানের সাথে যোগাযোগ করুন। সন্তান হবার পর প্রায় সকলেরই ত্বক ও চুল একদম নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকে পড়ে বয়সের ছাপ, আর প্রচণ্ড চুল উঠতে থাকে। এই সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে কেবল একজন রূপ বিশেষজ্ঞ। যদি পার্লারে যাওয়া সমস্যা হয়, তাহলে বাসায় কাউকে ডেকে নেবেন। আজকে অনেক বিউটিশিয়ানই বাসায় এসে ফেসিয়াল সহ নানা রকমের রূপচর্চা করিয়ে থাকেন। খরচও তেমন বেশী না। এমন কারো সাথে যোগাযোগ করে নিন। একটু কষ্ট করে হলেও নিজের সৌন্দর্যচর্চায় সপ্তাহে একদিন কয়েকঘণ্টা দিন।
৪) বিউটিশিয়ানের কাছে রূপচর্চা সম্ভব না হলে হতাশ হবেন না, নিজেই কিছু সাধারণ রূপচর্চা করুন। বাজারে অনেক রকম ফেসমাস্ক কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো কিনে ব্যবহার করতে পারেন। একদম অল্প সময়ে রূপচর্চা, সন্তানের ঘুমের ফাঁকেও করতে পারবেন। নিদেন পক্ষে মুলতানি মাটির সাথে চন্দন, কাঁচা দুধ ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন। সব ধরণের ত্বকেই মানিয়ে যাবে।
৫) চুল পাতলা হয়ে যাওয়া রোধ করতে সপ্তাহে দুইদিন চুলে পিঁয়াজের রস মাখুন মাথার ত্বকে। এতে কি হবে, নতুন চুল গজাবে খুব সহজে আর চুল পড়াও বন্ধ জবে। কোন ঝামেলা ছাড়াই চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আর হ্যাঁ, খুশকিও দূর হবে।
৬) সন্তান হবার পর বলাই বাহুল্য যে নিজের পুরনো কাপড়গুলো অনেকেরই গায়ে লাগে না। যতদিন সেসব কাপড় আবার পরতে না পারছেন, ততদিন তো আর স্টাইলকে দূরে রাখা যায় না। ব্যস্ততার মাঝেই আস্তে আস্তেই নিজের জন্য নতুন কিছু পোশাক কিনে বা বানিয়ে ফেলুন, যেগুলো আপনার বাড়তি ওজন বা অন্যান্য ত্রুটি দেখে রাখবে। আজকাল অনেক ফ্যাশন হাউজেই মায়েদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি আরামদায়ক ও স্টাইলিশ পাওয়া যায়, সেগুলো কিনে ফেলুন।
৭) সন্তান পালন একটি খুব কঠিন কাজ, বলতে গেলে নিজের জন্য কোন সময়ই পাওয়া যায় না। কিন্তু তবুও, এর মাঝেই চেষ্টা করুন একটি বিশ্রাম নিতে। যত বিশ্রাম নেবেন, যেটুকু ঘুমাতে পারবেন আপনার সেটুকুতেই লাভ। ঘুমালে শরীর, মন ও সৌন্দর্য সবকিছুরই উপকার হয়।
৮) ব্যস্ততার ফাঁকেও নিজেকে একটু গুছিয়ে রাখুন। যেন আই ব্রো নিয়মিত প্লাক করাবেন। একটু চুল আঁচড়ে বেঁধে রাখুন, মুখে বুলিয়ে নিন পাউডার, হালকা সাজগোজ করুন। দেখবেন নিজের কাছেই ভালো লাগছে। এভাবে আস্তে আস্তে নিজেকে গুছিয়ে নিন।
সবার শেষে মনে রাখবেন। সন্তান আপনার জীবনেরই একটা অংশ। কিছু বছর পর সব ঠিক হয়ে যাবে, এমনটা ভেবে ভুল করবেন না। সন্তান আপনার সাথে আজীবন থাকবে। তাই সন্তানের দেখাশোনা ঠিক রেখেই নিজেকেও যত্ন করুন। নিজের আত্মবিশ্বাস যখন বেড়ে যাবে, তখন জীবনের সব কিছুতেই ভালো লাগা খুঁজে পাবেন।
0 comments:
Post a Comment